প্রতি বছর বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে আয়োজিত হয়। বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে ২০২৫ সালে অংশ নিতে পারবে ২০০৭-২০১৮ সালে জন্মগ্রহণ করা বাংলাদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। মোট ৩ টি ক্যাটাগরিতে ৮ম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়াও নতুন ক্যাটাগরির ঘোষণা পরবর্তীতে আসতে পারে।
-
ক্যাটাগরি
১। ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি ২। ক্রিয়েটিভ মুভি ৩। ফিজিক্যাল কম্পিউটিং
মূলথিম
প্রতিবছর আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন মূলথিম প্রদান করেন। বিডিআরও তেও একই মূলথিম অনুসরণ করা হয়। প্রতিযোগী দলদের থিমের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্যই রোবট তৈরি করতে হয়।
যেমন – ২০২৪ সালের রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য নির্ধারিত মূলথিম ছিলো “Future Marine City Busan: Industry, Tourism, Culture” । ২০২৫ সালের মূলথিম আরো কয়েক মাস পর ঘোষণা হতে পারে। মূলথিমের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা তাই নিজেদেরকে আগে থেকেই রিসার্চ করে রাখতে হবে।
৩ টি ক্যাটাগরিতে এই থিম অনুসরণ করা হবে-
১। ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি
২। ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরি
৩। ফিজিক্যাল কম্পিউটিং ক্যাটাগরি
এই ক্যাটাগরিগুলোতে প্রতিযোগিতার সময় প্রদান করা থিমের সাথে সম্পর্কিত কোন সমস্যা রোবটের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তাই এই ৩ টি ক্যাটাগরিকে থিম সম্বলিত ক্যাটাগরি বলা হয় ।
গ্রুপ
২০২৫ সালে জন্মসালের ভিত্তিতে ৪ টি গ্রুপে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে
-
থিম সম্বলিত ক্যাটাগরিতে একটি দলে একজন থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পর্যন্ত সদস্য থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে একটি দলের সকল সদস্যকে একই গ্রুপের হতে হবে। যেমন - একই দলের সবাই সিনিয়র লো গ্রুপের হতে পারবে (দলের সবার জন্মসাল ২০১০ - ২০১২ সালের মধ্যে)। কিন্তু একই দলে একজন সিনিয়র লো ও আরেকজন সিনিয়র হাই একসাথে অংশ নিতে পারবে না। কেউ চাইলে এককভাবেও (Individual Participation) একটি দল গঠন করতে পারবে
প্রস্তুতি নেবার পরামর্শ
- ক) সবার আগে রোবট বানানো শিখতে হবে। এজন্য চাইলে রোবটিক্স সম্পর্কিত বই পড়া যেতে পারে, অনলাইন থেকে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল অনুসরণ করা যেতে পারে কিংবা রোবটিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মশালায়ও হাতেকলমে অংশ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড নিয়মিত বিভিন্ন পর্যায়ের রোবটিক্স কর্মশালা আয়োজন করে থাকে।
- খ) রোবটিক্স শেখার কোন শেষ নেই। চাইলে কোন একটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দিয়ে শেখা শুরু করা যেতে পারে। যেমন, বাংলাদেশে আরডুইনো, ইএসপি৩২, রাস্পবেরি পাই, জ্যাটসন ন্যানো ইত্যাদি নানারকম ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা সিংগল বোর্ড কম্পিউটার পাওয়া যায়। প্রথমে এরমধ্যে যেকোনো একটি বোর্ডের মাধ্যমে শেখা শুরু করতে হবে।
- গ) তবে রোবটিক্স শিখতে গেলে ইলেক্ট্রনিক্সের বেসিক কনসেপ্ট, বিভিন্ন হার্ডওয়্যার ডিভাইস নিয়ে হাতেকলমে কাজ করা, প্রোগ্রামিং শেখাসহ আরও নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন হয়। তাই যেকোনো একটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নিয়ে কাজ করা শুরু করার সময় এই বিষয়গুলোও খেয়াল রাখতে হবে।
- ঘ) কোন একটি টিউটোরিয়াল বা নির্দেশনা অনুসরণ করে কিছু তার জোড়া লাগিয়ে একটি সার্কিট তৈরি করতে পারলেই রোবট বানানো শেখা সম্পূর্ণ হয় না। প্রতিটি ধাপে যেসব ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো কীভাবে কাজ করে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কেমন আচরণ করে, ডিভাইসগুলো সম্পর্কে টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি শিখতে হবে। আবার ওই প্রোজেক্ট তৈরি করতে যেই প্রোগ্রামিং লাগবে সেটির সিনট্যাক্স, ব্যবহার ইত্যাদিও শিখতে হবে যথাযথভাবে।
- ঙ) সব রোবটে একই প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয় না। বাংলাদেশে বিভিন্ন রোবট তৈরিতে সি প্রোগ্রামিং, সি++, পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট সহ আরও বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা। তুমি যেই ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ব্যবহার করবে সেই বোর্ডে কোন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা যায় সেটি আগে জেনে নিবে। এরপর সেই প্রোগ্রামিং ভাষা ভালোভাবে শিখবে। তবে একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে গেলে পরবর্তীতে নতুন আরও প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা শেখারও বিভিন্ন রকম রিসোর্স, বই, টিউটোরিয়াল অনলাইনে ও অফলাইনে পাওয়া যায়।
- চ) বিভিন্ন রকম রোবট বানানো বাসায় বারবার চর্চা করতে হবে। যতবেশি চর্চা করা হবে, তত ভালো শিখতে পারবে।
- ছ) থিম সম্বলিত ক্যাটাগরির নিয়মাবলী (রুলবুক) বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইট থেকে ভালো করে জেনে নিতে হবে।
- জ) থিম সম্বলিত ক্যাটাগরিতে এইবছরের মূলথিম নিয়ে রিসার্চ করা জরুরী। মূলথিমে যেই বিষয়বস্তু বলা আছে, রিসার্চ করে সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। এমন বিভিন্ন সমস্যা খুঁজতে হবে, যেখানে রোবট মানুষের উপকার করতে পারবে এবং ওই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
- ঝ) থিম সম্বলিত ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার সময় তাৎক্ষণিক সাবথিম দেয়া হবে। সাবথিম মূলথিমের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ (compatible) থাকবে। যেমন: ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের মূলথিম ছিল “The Olympics”। এর পাশাপাশি সেই বছর সাবথিম দেয়া হয় “Paralympics”; যার সাথে মূলথিম সরাসরি সম্পর্কিত। থিম সম্বলিত ক্যাটাগরিতে অংশ নিতে হলে রোবটকে অবশ্যই মূলথিমের এবং সাবথিমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ (compatible) রাখতে হবে। এজন্য বাসায় বিভিন্ন সম্ভাব্য সাবথিম চিন্তা করে নানারকম রোবট তৈরি করা চর্চা করতে হবে। তাহলে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত রাখা যাবে প্রতিযোগিতার সময় পাওয়া সাবথিম অনুযায়ী রোবট নিয়ে কাজ করার জন্য।
- ঞ) ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির প্রস্তুতির জন্য বাসায় রোবট তৈরি চর্চা করার পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন দেয়ার চর্চা করতে হবে।
- ট) ক্রিয়েটিভ মুভি ক্যাটাগরির প্রস্তুতির জন্য রোবট তৈরির পাশাপাশি শ্যুটিং করা, ভিডিও এডিটিং করাও শিখতে হবে।
- ঠ) ফিজিক্যাল কম্পিউটিং ক্যাটাগরির প্রস্তুতির জন্য স্ক্র্যাচ বা এন্ট্রি সফটওয়্যারে এনিমেশন ও রোবটের কোডিং তৈরি করা চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন নিয়ে বাসায় চর্চা করতে হবে।