চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে আমাদের ছেলেমেয়েদের রোবটিক্স, আইওটি, প্রোগ্রামিং প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন। বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিং, রোবটিক্স এ হাতেখড়ি দেয়া হলে তা শিশুদের চিন্তাশক্তি বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে – গড়ে তোলে তাদের যৌক্তিক মানুষ হিসেবে। চীন, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল পর্যায়ে রোবটিক্স ক্লাব স্থাপনের মাধ্যমে বাচ্চাদের হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয়। ব্যবহার করা হয় লেগোর মতো ব্লক-বেজড রোবটিক্স কিট যাকে কন্ট্রোল করা যায় স্ক্র্যাচ এর মতো ভিজুয়াল প্রোগামিং-এর মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই এধরণের সমস্যা সমাধান্যের মাধ্যমে ঘটে তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ – তাদের সামনে উন্মোচিত হয় এক নতুন দিগন্ত।
অনেকের ধারণা শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে হলেই প্রোগ্রামিং জানা দরকার বা রোবটিক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে গেলেই রোবটিক্সে শিক্ষা নিতে হয়। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই তা নয়। চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের এ যুগে আমরা যে বিষয়েই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই না কেন প্রোগ্রামিং এবং রোবটিক্সের বেসিক ধারণা আমাদের থাকতে হবে। বাংলা আমাদের নিজের প্রাণের ভাষা – তাকে তো ভালোভাবে রপ্ত করতেই হবে, সেই সাথে ইংরেজিটাও জানতে হবে – আর তৃতীয় যে ভাষাটি জানতে হবে সেটি হলো প্রোগ্রামিং এর ভাষা। অন্ততপক্ষে একটি প্রোগ্রামিং ভাষায় আমাদের দক্ষ হতে হবে।
যখন আমরা কোন একটি রোবট তৈরি করতে যাই আমাদের মূলত একটি সমস্যা সমাধান করতে হয়। প্রথমে ঠিক করতে হয় যে রোবটটি কী কাজ করবে? কিভাবেই বা সে কাজটি করবে? রোবটটি দেখতে কেমন হবে? কিভাবে রোবটের বডি তৈরি করবো? রোবট যে কাজ করবে সেই কাজটি কিভাবে প্রোগ্রামিং এর ভাষায় রূপান্তর করবো? আর কিভাবেই বা এই প্রোগ্রাম রোবটের সাথে যোগাযোগ করবে? তার মানে রোবটিক্স আমাদের একটা সমস্যা সমাধানের যে ধাপগুলো আছে সেগুলো নিয়ে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে শেখায়। সমস্যা সমাধানের সাধারণ উপায়ের বাইরেও কিভাবে সে সমস্যাটির বিকল্প, সহজ এবং কার্যকরী সমাধান দেয়া যায় – তা নিয়ে ভাবতে শেখায়। যার ফলে আমাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাদের অবশ্যই প্রোগ্রামিং জানতে হয়। একটি সাধারণ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর আউটপুট যখন আমরা মনিটরের পর্দায় দেখি সে আউটপুট দেখে আমরা যে আনন্দ পাই – তার চেয়ে আমরা ঢের বেশি আনন্দ পাই যখন দেখি আমার নিজের লেখা প্রোগামের মাধ্যমে আমার তৈরি রোবটটি ডানে বামে ঘুরছে। তখন সেটিতে আমরা আরও বেশি ফিচার যোগ করে বাধা অতিক্রম করতে শেখাতে পারি, তাতে একটি রোবটিক বাহু যোগ করে কোন একটি জিনিষকে ধরতে শেখাতে পারি অথবা কোন একটি জিনিষকে খুঁজে বের করতে শেখাতে পারি। এর ফলে আমাদের প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি রোবট তৈরি করে তাকে প্রোগ্রামিং করা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। একবারের চেষ্টাতেই এ সমস্যার সমাধান করা যায় না। কাজ করতে গিয়ে ভুল হয়। সে ভুল ঠিক করে আবার চেষ্টা করতে হয়। এভাবে বার বার চেষ্টা করতে করতে এক সময় রোবটটি সফলভাবে কাজ করে। এই যে ভুল খুঁজে বের করা, বার বার চেষ্টা করা – এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আমাদের মধ্যে হাল ছেড়ে না দেয়ার মনোভাব গড়ে উঠে – যা আমাদের পরবর্তীতে সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলে।রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে গেলে সাধারণত আমরা দলগতভাবে কাজ করি। এখানে প্রোগ্রামিং, ইলেক্ট্রনিক্স এবং মেকানিক্যাল – তিনটি অংশ থাকে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিয়ে কাজ করা যায় – তারপর যখন প্রত্যেকের কাজ একসাথে করে একটি প্রজেক্ট সম্পূর্ণ হয় তখন পুরো বিষয়টির উপর সকলেরই একটি পরিপুর্ণ ধারণা হয়ে যায়। এভাবে একসাথে কাজ করার ফলে আমাদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের মধ্যে আমরা নলেজ শেয়ার করতে পারি। আর দীর্ঘদিন চেষ্টা করে যখন স্বপ্নের সেই রোবটটি তৈরি হয়ে যায় তখন যে পরিতৃপ্তি পাওয়া যায় এবং নিজের উপর যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় তা পরবর্তীতে আমাদের আরও ভালো কিছু করার জন্য অনেক প্রেরণা দেয়।
এবছর আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ৭ম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০২৪। আর দেরি নয়। প্রস্তুত হয়ে যাও তোমরা। জয় করে নাও বিশ্বকে।